কখনো শেফ কথাটা আপনার মাথায় আসলে যে কয়েকটি বিষয় প্রথমে মাথায় আসবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শেফ মানে যে প্রফেশনাল রান্না ঘরে অতিথিদের জন্য সাদা পোশাক পরে রান্না করে।
প্রতিটি জিনিসের প্রথম আছে, মানে কোন একটি বিষয় একদিনে তৈরি হয়নি। এই পেশায় যারা জড়িত, যারা মন থেকে এটি ভালোবাসে তাদের প্রত্যেকের কাছে তাদের পেশাগত পোশাক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। একজন প্যাশনেট শেফের কাছে তার পোশাক তার কাছে বিশেষ কিছু আর এই পোশাক অনেক পথ পরিক্রম করে আজকের এই অবস্থায়।
দুইজন বিখ্যাত ফ্রেঞ্জ শেফের হাত ধরে শেফ, রান্না, ব্রিগেড আজকের এই অবস্থায় তাদের মধ্যে অন্যতম হল ‘’মারি এন্টোনি ক্রিমি (Marie-Antoine Careme)’’। তিনি ১৮২২ সালে পোশাক পরিহিত দুইজন শেফের স্কেচ করেছিলেন, যাতে করে এই পেশার সন্মান আর পেশাদারিত্বের অনুভূতি প্রকাশ পায়। বিখ্যাত আমেরিকান কুলিনারি ইন্সটিটিউট (CIA) এর শেফদের মতে শেফ পোশাকে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়, পরিস্কার, পেশাদার ইমেজ, পার্থক্য প্রদান করা আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
শেফের পোশাক বলতে শেফ টুপি, জ্যাকেট, প্যান্ট, এপ্রোন, নেকারচিপ, তোয়ালে আর জুতা। আজকাল প্রতিটি কুলিনারি প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের শেফের পোশাক পরে ক্লাস করতে হয়, এটি তাদের জন্য ব্যাধতামুলক। জ্যাকেটর সাথে প্রতিষ্ঠানের নাম আর নিজের নাম ও পেশাদারি জায়গায়ার নাম এমব্রয়ডারি করা থাকে।
জ্যাকেট: আগে বলা হয়েছে ১৮২২ সালে বিখ্যাত শেফ মেরি এন্টোনি ডাবল ব্রেস্টেড একটি জ্যাকেট চিত্রিত করেন। এই ডাবল ব্রেস্টেড জ্যাকেট অপরিস্কার হলে উল্টো করে পরা যেত। ১৮৭৮ সাল অবধি এটি এভাবে প্রচলিত ছিলো এর পরে আর এক বিখ্যাত শেফ এস্কোফিয়ার এর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনেন, বিশেষ করে বোতামগুলোকে ফ্রেঞ্জ নট হিসেবে ডিজাইন করা হয় যেন গরম দ্রুত অপসারিত হয়। আর সাদা হওয়ার কারনে তাপ শোষনের পরিবর্তে অপসারিত হয়।
শেফ টুপি: শেফের টুপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো চুলকে ফুড থেকে বাইরে রাখা, আর টুপির মাধ্যমে শেফের অবস্থান আর স্টাটাস বুঝানো। তাছাড়া, হাজার হাজার বছর আগে খাবারে বিষ খাওয়ানো একটা প্রচলিত নিয়ম ছিলো শত্রুদের ঘায়েল করতে। সেই সময় রাঁধুনিদের বিশেষ ভাবে দেখা হতো রাজকীয় পরিবারে। সব সময় অনুগত রাঁধুনিদের নিয়োগ দেওয়া হতো। শত্রুদের প্রলোভন এড়াতে তাদের যথেষ্ট পরিমান ধনসম্পদ দেওয়া হতো আর সাথে রাজকীয় আকৃতির কাপড়ের তৈরি মুকুট পরার অধিকার ছিলো যদিও সেই মুকুটে গয়নার অভাব ছিলো। সেইসময় বিভিন্ন দেশের রাঁধুনিরা বিভিন্ন রঙের টুপি পড়তো- স্প্যানিশ রাঁধুনিরা সাদা উলের টুপি পরিধান করতো, জার্মানরা ট্যাসেল নেপোলিয়ান টুপি পড়তো, আর ব্রিটিশ রাঁধুনিরা কালো রঙের টুপি পড়তো। আর বিভিন্ন উচ্চতার টুপির মাধ্যমে বাবুচিদের পদের অবস্থান বুঝা যেত। আবার রন্ধনপ্রণালীর জনক এস্কোফিয়ার বাবুচিদের বা রাঁধুনিদের নিখুঁত কাজের জন্য লা টোক ব্লাঞ্চে পরার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। এইভাবে টুপি শেফদের পোশাকের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে যার মাধ্যমে খাবারে চুল পড়া থেকে বিরত রাখতো।
এপ্রোন: এপ্রোন পরা হয়ে থাকে নিরাপত্তা কে মাথায় রেখে যেন কোন সস বা গরম কোন কিছু যেন জ্যাকেটে না পরে। ঐতিহ্যগতভাবে, এপ্রোনের উদ্দেশ্য ছিল পরিধানকারীর পোশাককে খাবারের দাগ ও গন্ধ থেকে রক্ষা করা।
প্যান্ট: এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পোশাক, এটি এমনভাবে বানাতে হয় যেন বেশি ঢিলে বা টাইট হয়ে না যায়। যাতে হাঁটতে বা অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা না হয়।
নেকার চিফ: নেকার চিফ বাঁধা ক্র্যাভেট-স্টাইল বর্তমানে ইউনিফর্মে একই ফিনিশিং টাচ যোগ করে। মূলত, যখন রান্নাঘর অসহনীয়ভাবে গরম ছিল, তখন গলার এই নেকার কাপড় মুখের ঘাম শুষে নিত। এটির একটি উদ্দেশ্যও ছিল, ঘাড় এবং গলার অংশগুলিকে চুলার শীর্ষ এবং কুলারের মধ্যে চরম তাপমাত্রার ওঠানামা থেকে সুরক্ষিত রাখা। ঘাড় খুব গরম হলে খুব ঠান্ডা হলে, শেফ অসুস্থ হতে পারে, ঠান্ডা লেগে যেতে পারে বা আরও খারাপ নিউমোনিয়া হতে পারে। আধুনিকতার সাথে সাথে অনেক প্রতিষ্ঠানে এইটা ব্যবহার করে না তবে প্রায় সব কালিনারি ইন্সটিটিউট এর ছাত্র-ছাত্রীদের এটি পরতে হয় ব্যবহারিক ক্লাসে।
তোয়ালে: এটি শেফদের কোমড়ে ঝুলানো থাকে এপ্রোনের বন্ধনির সাথে। বেশিরভাগ শেফ চুলা বা ওভেন থেকে গরম আইটেম তোলার সময় তাদের হাত রক্ষা করার জন্য পাশের তোয়ালে ব্যবহার করেন। এটি কিন্তু ময়লা বা টেবিল পরিস্কারের জন্য না।
শেফ জুতা: শেফের জুতা শেফ ইউনিফর্মের অন্যতম অপরিহার্য অংশ, এটি এমন হতে হবে যেন আপনি লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বা মুভমেন্ট করার সময় সেইফটি দিবে। রান্নাঘর হলো হ্যাজার্ড প্লেইস, যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে। তাই সেইফটি কিচেন সু ছাড়া রান্না ঘরে প্রবেশ নিষেধ। আপনাকে সবসময় আপনার জুতা পরিধান আর পরিস্কার করে কিচেনে ঢুকতে হবে আর এটি অবশ্যই স্লিপ প্রতিরোধী হতে হবে।
নিজের পোশাককে সন্মান করুন, এটি করা আপনার দায়িত্ব। মনে রাখবেন, যেখানে ভক্তি আর ভালোবাসা থাকে না সেখানে সেরা কিছুর জন্ম নেবে না। ধন্যবাদ।