পিঁয়াজ এবং শ্যালটের পার্থক্য / Onion Vs Shallots
পেঁয়াজ: পেঁয়াজ (Allium cepa, ল্যাটিন “cepa” থেকে এসেছে যার অর্থ “পেঁয়াজ”) যা সাড়া বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি সবজি, এটি বাল্ব পেঁয়াজ বা সাধারণ পেঁয়াজ নামেও পরিচিত, এটি প্লান্টা রাজ্যর একটি ব্যাপক চাষকৃত সবজি। ধারণা করা হয়, পূর্ব বা মধ্য এশিয়াতেই প্রথম এই সবজিটির উৎপত্তি। প্রায় ২১ ধরনের পেঁয়াজ রয়েছে পুরো বিশ্বে। সাধারণ পেঁয়াজের জাতগুলো হলো: লাল, সাদা এবং হলুদ। প্রতিটি ধরণের পেঁয়াজেই সিংহভাগ পানি, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার বিদ্যমান থাকে। পেঁয়াজ এর মধ্যে এছাড়াও লৌহ, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন বি-৬ এর মত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে। পেঁয়াজ ব্যবহৃত খাবারের তালিকা অনেক বড় তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য খাবার হচ্ছে: অনিয়ন রিংস, পেঁয়াজু, কাচুম্বার সালাদ ইত্যাদি।
শ্যালট
শ্যালটগুলোও, পেঁয়াজ মতোই অ্যালিয়াম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে এটি প্রথম পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরণের শ্যালট রয়েছে যার মধ্যে প্রধান তিনটি জাত হচ্ছে – ধূসর শ্যালট, প্রিজমা শ্যালট এবং জার্সি/গোলাপী শ্যালট। রসুনের মতো, শ্যালটগুলোও একাধিক কোয়া একসাথে হয়ে বড় হতে দেখা যায়। শ্যালটের ত্বক সোনালী বাদামী থেকে ধূসর এবং ধূসর থেকে গোলাপী লাল পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে। শ্যালট মূলত রন্ধনসম্পর্কীয় ব্যবহারের জন্য কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে দীর্ঘ-ঋতু অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। শ্যালট আপনি শাক-সবজির মতো বেশি খেতে পারবেন না। ইউএসডিএ অনুসারে, এক আউন্স কাঁচা শ্যালটে অল্প পরিমাণে ভিটামিন বি, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার এবং ভিটামিন সি থাকে। অনেক ডিশেই এখন শ্যালট ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: ডাক কনফিট, ফ্রেঞ্চ পেপার স্টেইক, চিলি ক্রেব ইত্যাদি।
পেঁয়াজ এবং শ্যালটের পার্থক্য:
শ্যালট এবং পেঁয়াজ উভয়ই একে অপরের আত্মীয় ঠিকই কিন্তু স্বদের মধ্যে তারতম্য লক্ষ করা যায়। উভয়ের স্বাদই কিছুটা মিষ্টি, কিন্তু পেয়াজের স্বদ কিছুটা তিক্ষ্ম। কেউ কেউ আবার শ্যালটে রসুনের স্বদও খুজে পায়। শ্যালটগুলো সাধারণত পেঁয়াজের চেয়ে আকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে। শ্যালট যেহেতু আকারে ছোট, তাই রান্নার সময় একটি পেঁয়াজের পরিবর্তে কয়েকটি শ্যালটের ব্যবহার করতে হবে।
পেঁয়াজ এবং শ্যালট উভয়েরই একটি পাতলা এবং কাগজের মতো চামড়া রয়েছে। রান্নার সময় সেই চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হয়। তাদের এসব মিলের জন্য রান্নায় এরা একে অপরকে প্রতিস্থাপন করতে পারে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মাথায় রাখতে হবে। যেমন, ভাজার সময় উভয়ই ক্যারামেলাইজ করে, কিন্তু উচ্চ তাপে রান্নার ফলে শ্যালটের স্বাদ তেতো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না। শ্যালটগুলো প্রায়শই এমন এমন খাবারের বেইস ফ্লেভার হিসাবে ব্যবহৃত হয় যেগুলোর জন্য পেঁয়াজ বা রসুনের চেয়েও আরও সূক্ষ্ম/মৃদু স্বাদের কিছু প্রয়োজন। আর এই মিষ্টি এবং সূক্ষ্ম স্বাদের বেইস মূলত ফরাসি রন্ধনপ্রণালীর সাথে যুক্ত। বিভিন্ন এশিয়ান খাবারেও শ্যালট পাওয়া যায় এবং থাইল্যান্ডে শ্যালট বিশেষভাবে জনপ্রিয়। সালাদের ড্রেসিংয়ের ক্ষেত্রেও পেঁয়াজের পরিবর্তে শ্যালট ব্যবহারে ফলাফল ভালো পাওয়া যায়। পেশাদার রান্নাঘরে শেফরা পেঁয়াজের তুলনায় শ্যালট বেশি পছন্দ করেন কারণ এরা আকারে ছোটো হওয়ায় এদেরকে মার্জিত ভাবে কাটা যায় এবং খাবারে সবগুলো শ্যালট টুকরো সমান সাইজের দেখা যাওয়ার কারনে খাবারটিরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
সারমর্ম
যদি আপনি খাবারের মধ্যে সুক্ষ্ম/হালকা/মৃদু স্বাদ দিতে চান তখন শ্যালট ব্যবহার করুন। অন্যথায়, যদি আপনি খাবারের মধ্যে তীব্র/ভারী/ঝাঁজালো স্বাদ দিতে চান তখন পেয়াজ ব্যবহার করুন।
লেখায়: ফয়সাল ভূইয়াঁ