এই মাছ দেখতে ভয়ংকর এই মাছ। আবার কয়টি এক নাম এ পরিচিত। আমরা বলি মঙ্কফিশ, সন্ন্যাসী মাছ, এছাড়া একে ব্যাঙ-মাছ এবং সামুদ্রিক শয়তান মাছও বলা হয়। আটলান্টিক প্রজাতির এই মাছ কে লোফিয়াস পিস্কাটোরিয়েস আর মেডিটেরিয়ান প্রজাতিকে লোফিয়াস বাডিগেসা নামে ডাকা হয়।
লোফিয়াস প্রজাতির এই ফিশ এর দাঁতগুলো খুব সুচালো হয়, এই দাঁত দিয়ে সে শিকার করা ও খাবার খাওয়া দুইটাই অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে। এর মাথা চ্যাপ্টা, প্রশস্ত আর অনেকটা বড়, প্রশস্ত মুখটি মাথার পূর্ববর্তী পরিধির চারপাশে প্রসারিত এবং উভয় চোয়াল লম্বা, সূক্ষ্ম দাঁতের ব্যান্ড দিয়ে সজ্জিত, যা ভিতরের দিকে ঝুঁকে আছে। এর মাথার পরের অংশটি কাতাল মাছের মাথার পরের বাকি অংশটি যেমন ছোট দেখায় এর অংশটিও তেমন। এর পাখনাগুলো হাঁটার মত কাজ করে সাঁতার কাটার পরিবর্তে। সমুদ্রের নিচে, শৈবালে আর বালুতে নিজেকে লুকিয়ে রাখে, এরা রং পরিবর্তন করতে পারে আর পাখনাগুলো আলো হিসেবে ব্যবহার করে অন্য মাছ এর কাছে যায়। এভাবে সে প্রচুর শিকার ধরতে পারে এবং আশেপাশে সাঁতার কেটে যা পায় তাই খায়। এই ফিশ লম্বায় ৫/৬ ফুট এর মত হয়, ওজন প্রায় ১২/১৪ কেজি পর্যন্ত হয়। পুরুষ মাছ ৭ বছর আর স্ত্রী মাছ ১৩ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। গভীর জলের এই ফিশ উত্তর আটলান্টিক থেকে ভুমধ্যসাগর পযন্ত বিস্তৃত।
মাছের মধ্যে মঙ্কফিশকে বিশ্রী মাছ হিসেবে যতই গননা করা হয়ে থাকুক না কেন কিন্তু এই মাছ সুস্বাদু এর টেক্সচার অনেকটা লবস্টার এর মত। এর মাংস দৃঢ়, মিষ্টি গন্ধযুক্ত, চর্বিহীন এবং সাদা, হালকা ধূসর বা হালকা গোলাপী রঙের, দৃঢ় হয়ে থাকে।
ফাইন কিচেনের মেনুতে এইটা খুব জনপ্রিয় আর এর লিভার জাপানি ফুডে ব্যবহৃত হয়। সন্ন্যাসী মাছ কম চর্বি এবং ক্যালোরিযুক্ত। মঙ্কফিশে উপকারী খনিজ, প্রোটিন এবং ভিটামিনে পরিপূর্ণ আর সেলেনিয়ামের একটি ভাল উৎস। এই মাছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্ট এবং থাইরয়েড স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এছাড়া মঙ্কফিশ মস্তিষ্ক-বুস্টিং যেমন ভিটামিন বি৬ এবং বি১২ এ পরিপূর্ণ। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মঙ্কফিশে- এনার্জি ৭৬ কিলোক্যালরি, চর্বি ১.৫ গ্রাম (যার মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.৩ গ্রাম), প্রোটিন ১৪ গ্রাম, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ।
এই মাছ বহুমুখীভাবে রান্না করার মত একটি সামুদ্রিক মাছ। আপনি এই মাছ, বেক, গ্রিল, পোচ, ভাজা মানে সব কুকিং মেথড এ উপযুক্ত। আপনি তান্দুরি বা মেরিনেট করে রান্না করার আগে এই মাছের সাথে লেবুর জুস দিয়ে রান্না করার পর এর স্বাদ অসাধারণ।
আমি প্রথম এই মাছ ইউনিভার্সিটির কিচেনে ক্লাসে পাই। প্রথম দেখায় একে আমার মাছ মনে হয়নি কেমন যেন দেখতে। এর স্কিনটা অনেকটা চুইংগাম এর মত রাবারি হয়। আর এখন আমি প্রতিদিন এই মাছ দেখি, অডার করি, পুরো মাছ বা মাছের স্টেক কুক করি।