ক্রাস্টেসিয়ানের সামুদ্রিক এই লাবস্টার বিশ্বব্যাপী খাদ্য রসিকদের কাছে জনপ্রিয় খাদ্য। এর রসালো মাংস, স্বতন্ত্র গন্ধ ও উমামি স্বাদ যেন হৃদয় স্পর্শ করে। দীর্ঘ সময় ধরে কালিনারি জগতে মূল্যবান খাদ্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এই লবস্টার।
লবস্টার তার অনন্য স্বাদ ও বহুমুখীতার কারণে ক্লাসিক ফ্রেঞ্চ খাবার থেকে আধুনিক এশীয় ফিউশন সৃষ্টি করতে কুইজিনের ইনগ্রিডিয়েন্ট হিসেবে অসাধারণ জায়গা করে নিয়েছে। লবস্টারের স্বাদ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
লাবস্টারের নিজস্ব স্বতন্ত্র স্বাদ,গন্ধ, টেক্সচারে রয়েছে ভিন্নতা। এই লবস্টার কিভাবে কালিনারিতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ও এর স্বাদের রহস্য কি তা জানার জন্যই এত লেখা। সেই সাথে বিশ্বজুড়ে এইটি কিভাবে রান্নার গুরুত্বপূর্ণ অংশে জড়িয়ে রয়েছে তা সম্পর্কে থাকবে বিস্তারিত-
১.মৌলিক স্বাদ
লবস্টার সামুদ্রিক খাবারের একটি উৎস। এর অসাধারণ ফ্লেভার ও উমামি স্বাদের সূক্ষ্ম একটি ভারসাম্য রয়েছে। যা সী-ফুডকে চিহ্নিত করে। এদের মাংসে ফ্যাট কম থাকে ও প্রোটিন বেশি থাকে। এর বিশুদ্ধ ও সূক্ষ্ম স্বাদ রয়েছে। যা বিভিন্ন স্বাদ ও রান্নার পদ্ধতি সাথে সুন্দরভাবে সংযুক্ত হয়। লবস্টার রান্নার পদ্ধতি সঠিক হল এর আসল মিষ্টি স্বাদ ও তুলতুলের টেক্সচার অক্ষুণ্ণ থাকে। কালিনারি প্রফেশনে ও সী-ফুডপ্রেমীদের লবস্টারের টেস্টকে প্রিয় স্থান প্রদান করতে বাধ্য।
২.পরিবেশগত প্রভাব-
লবস্টারের স্বাদ নির্ভর করে এর প্রজাতি এবং পরিবেশের ভিত্তিতে। এছাড়া পানির তাপমাত্রা লবণাক্ততা ও খাদ্যের উৎস (যা খায়) এগুলোর মাধ্যমে স্বাদের ভিন্নতা হতে পারে। রন্ধন পদ্ধতি, রান্নায় ব্যবহৃত মসলার ওপরও নির্ভর করে এর স্বাদ। রন্ধন পদ্ধতি ও মসলার ব্যবহারে যেমন স্বাদ বৃদ্ধি পায় তেমনি এর স্বাদের পারফেক্টনেস তৈরি করতে পারে।
চাষের ক্ষেত্রে লবস্টারের স্বাদের বৈচিত্রতা তৈরি হতে পারে। এজন্য যে পরিবেশে লবস্টার বৃদ্ধি পাবে তার ভিত্তিতে স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন ঘটে। অন্যদিকে, যে লবস্টার সামুদ্রিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে তার স্বাদ ও গন্ধ ভিন্ন হবে। এতে অথেনটিক একটি স্বাদ পাওয়া যায়। এদের গন্ধ আঞ্চলিক বৈচিত্রতার মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে। যেমন বিশ্বের অনেক অঞ্চল থেকে লবস্টার সংগ্রহ করার পর এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে টেস্ট করে পার্থক্যটা কোথায় তা বুঝতে পারা যায়। কারণ পরিবেশগত অবস্থা এবং খাদ্যের উৎসের পরিবর্তন রয়েছে।
যার ফলে এদের স্বাদের সূক্ষ্ম পার্থক্য ঘটে। যেমন মেইন লবস্টার মিষ্টি, রসালো মাংসের জন্য জনপ্রিয়। উত্তর আটলান্টিকের ঠান্ডা ও পুষ্টিকর পানিতে এর বেড়ে ওঠা। আবার স্পাইনি লবস্টার পাওয়া যায় উষ্ণ পানিতে। এই দুই ধরনের লবস্টারের স্বাদে পরিবর্তন রয়েছে।
৩.রন্ধন পদ্ধতি
রন্ধনশিল্পী তার হাতের জাদুতে সবাইকে মুগ্ধ করে ঠিকই। কিন্তু এক্ষেত্রে তা জানতে হয় বুঝতে হয়। লবস্টার সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে এর স্বাদের বৈচিত্রতাকে উপলব্ধি করতে হয়। এরপর কোন ধরনের লাবস্টারের সাথে কি কি উপকরণ মেশানো যায় কিভাবে রান্না করলে স্বাদ বৃদ্ধি পাবে তা জানতে হয়। যার ফলে এর স্বাদকে সূক্ষ্ম করে তোলা সম্ভব।
৪.বৈশ্বিক খাবারের লবস্টার
লবস্টার এর অনন্য স্বাদ ও বহুমুখীতার জন্য বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত। ইতালির ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘অ্যাস্টিস আল্লা‘ এর সাথে লবস্টার সম্পর্কযুক্ত। এটি লবস্টার সালাদের একটি জেস্টি ড্রেসি। স্পেনের জনপ্রিয় খাবার ‘আরজো কোন বোগান্তে‘ মূলত বাসমতি রাইসের সাথে লবস্টার পরিবেশন করা হয়। এশিয়ান কালিনারি ট্রেডিশনে লবস্টার অন্যতম। অন্যদিকে চাইনিজ কুইজিনের কুকিং ইনগ্রিডিয়েন্ট হিসেবে লবস্টারকে আদা ও স্ক্যালিয়ান দিয়ে ফ্রাই করা হয়।
যা অত্যন্ত সুস্বাদু ও অসাধারণ ফ্লেভার যুক্ত করে। জাপানের সাশিমিতে ব্যবহারযোগ্য এই লবস্টার যা এর সুক্ষ টেক্সচার ও ফ্লেভার কে জাগিয়ে তোলে। আমেরিকান কুইজিনে ও ইংল্যান্ডের সী-ফুড হিসেবে লবস্টার কুকিং ইনগ্রিডিয়েন্টের বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যা লবস্টার রোল ও লবস্টার বিস্কের মতো ক্লাসিক খাবার গুলোর ঐতিহ্যকে বজায় রাখে। ক্যারিবিয়ানর অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরিতে লবস্টারের সাথে বিশেষ মসলা ও গ্রীষ্মকালীনফল দিয়ে অনন্য স্বাদের স্থানীয় খাবার তৈরি করে।
‘সায়াদিহ‘ মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। এই খাবারে লবস্টার ব্যবহার করা হয়। এটি বাসমতি রাইস এবং মাছের পিলাফ যা সুগন্ধি মসলা ও ভেষজ উপাদানের সাথে যুক্ত করে তৈরি করা হয়।
লবস্টারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এর পরিপূরক উপাদান ও রান্নার কৌশলগুলোর একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য যুক্ত রয়েছে। এর সমৃদ্ধ, মিষ্টি ও উজ্জ্বল স্বাদ কালিনারি জগতকে সৃজনশীলতার মাধ্যমে উপস্থাপন করে। বিশ্বজুড়ে কুকিং ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে কালিনারিতে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
লবস্টারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য একটি ক্লাসিক পদ্ধতি রয়েছে। যা হলো বাটারের ব্যবহার, বাটারের ক্রিমি স্বাদ ও বাদামের মতো লবস্টারের মাংসের স্বাদ লবস্টারের মাংসের মিষ্টি স্বাদ একত্রে লবস্টারকে আরো সুস্বাদু করে তোলে। যেমন ট্যারাগন, চিভস এর মত বিভিন্ন হার্বস যুক্ত করে এর স্বাদকে তুলনামূলকভাবে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়। লবস্টারে দূর্দান্ত স্বাদ প্রদানের জন্য বিকল্প কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন Crisp অথবা Chilld (chardonnay) এর সাইট্রাস ও অকের মতো উপাদান যুক্ত করে লবস্টারের স্বাদকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়। এছাড়া যারা নন অ্যালকোহল যুক্ত লবস্টার পছন্দ করে তাদের জন্য লেবুর সাথে পানির কম্বিনেশনে সাইট্রাস তৈরি করা যায়।
এতে অন্যরকম একটি ফ্লেভার যুক্ত হয় ও লবস্টার স্বাদের পরিপূর্ণতা আসে। বৈশ্বিক রন্ধনপ্রণালীতে লবস্টারের স্বাদ অনন্য স্থান দখল করেছে। যেমন জাপানিজ কুইজিনে এর উমামি ও সমৃদ্ধ স্বাদ ব্রোথ পর্যন্ত বিস্তৃত অন্যদিকে ইন্ডিয়ান কুইজিনে খাবারের সুগন্ধযুক্ত মসলা পর্যন্ত এর অবস্থান লক্ষণীয়।
কালিনারি বিভিন্ন কৌশলেও এর জায়গা বেশ মজবুত। যেমন গ্রিল, লবস্টার বিস্ক, রোস্ট এ সকল রন্ধনকৌশলে লবস্টারের স্বাদ তীব্র বিকশিত হতে পারে। লবস্টারের মিষ্টির, রসালো মাংস, ঝাঁজালো সুক্ষ্ম আন্ডারটোন বৈশ্বিকভাবে একটি দামি উপাদান হিসেবে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় নিউ ইংল্যান্ডের লবস্টার থেকে শুরু করে বিলাসবহুল লবস্টার থার্মাইডর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। লবস্টার তার সফট মাংস, সমৃদ্ধ স্বাদ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে এক অসাধারণ খাবারে পরিণত হতে পারে। যা খাদ্যরসিক ও শেফদের কাছে অনন্য উপাদান। ক্লাসিক রন্ধন পদ্ধতি হোক বা আধুনিক রন্ধন পদ্ধতি লবস্টার কিচেনে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনকে জাগিয়ে তুলতে পারে।
লবস্টরের আসল আকর্ষণ এর নিজেস্ব গন্ধ। যা কালিনারিকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। অবশেষে এটাই বলা যায় লবস্টার ভোজন প্রেমীদের কাছে অসম্ভব প্রিয় ও কালিনারিতে রাজত্ব করার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ উপাদান।