History about Onion & Health benefits
পিঁয়াজ
রন্ধনশীল্পের বিলাসিতায় অনন্য ও অতিপ্রয়োজনীয় উপকরণ পিঁয়াজ। বিশ্বের বৃহত্তম উদ্ভিদ প্রজন্মের মধ্যে পিঁয়াজ একটি। আজ আমরা জানবো পিঁয়াজ সম্পর্কে কিছু তথ্য। পিঁয়াজ নিয়ে আরো কিছু বিশ্লেষণমূলক তথ্য আপনাদের জানাবো। আজকের আলোচনায় থাকবে পিঁয়াজের প্রথম পার্ট।
পরিচিতি
Onion(অনিয়ন)- ইংরেজি নাম। অ্যালিয়াম সেপা বৈজ্ঞানিক নাম। অ্যালিয়ামের রয়েছে অনেক বড় পরিবার বর্গ। এই পরিবারের অনান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছে – রসুন, শ্যালট, রেম্প, লিক, চাইব, চীনা পিঁয়াজ। এছাড়া প্রায় ৬০০-৯২০ ধরনের প্রজাতি রয়েছে এই পরিবারের অন্তর্গত।
কয়েক জাতের পিঁয়াজ রয়েছে। যেমন- সাদা পিঁয়াজ, লাল পিঁয়াজ, হলুদ পিঁয়াজ, স্ক্যালিয়ান(গ্রিন অনিয়ন), স্প্রিং পিঁয়াজ, মিষ্টি পিঁয়াজ (সুইট অনিয়ন), গাছ পিঁয়াজ, জাপানি বান্ঞ্চিং, কানাডা পিঁয়াজ ইত্যাদি। এশিয়া, ইরান, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল থেকেই পিয়াজের উৎপত্তি।
একটা চমৎকার বিষয় আপনাদের অনেকর জানা আবার অজানা থাকতে পারে। এটা হলো গাছ পিঁয়াজ বা মিশরীয় গাছ পিঁয়াজ। মনে হচ্ছে এটা আবার কি! মিশরে একধরনের পিঁয়াজ পাওয়া যায় যাকে বলা হয় “গাছ পিঁয়াজ”। আমরা সবাই জানি পিঁয়াজ মাটির নিচে বা গাছের গোড়ায় জন্মে। কিন্তু এই গাছ পিঁয়াজ গাছের গোড়ায় বা মাটির নিচে জন্মে না। অর্থাৎ ফলের মতো এটি গাছের আগায় শাখা-প্রশাখায় ধরে। অনান্য পিঁয়াজ গাছের মতোই গাছ হয় এই পিঁয়াজের।
তবে গাছের সবগুলো পাতার উপরে যে ফুলগুলো হয় তা থেকেই অস্তে আস্তে পিঁয়াজ হয়। এই গাছের গোড়া সাধারণ পিঁয়াজের মতোই কিন্তু গাছগুলো খাওয়ার উপযোগী নয় এবং অনান্য গাছের তুলনায় আকারে ছোট হয়। এই গাছ পিঁয়াজের আরো কিছু নাম রয়েছে। যেমন- ট্রি অনিয়ন, টপ অনিয়ন, ইজিপশিয়ান ট্রি অনিয়ন, উইন্টার অনিয়ন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হয় চীন, ভারতে। বর্তমানে পিঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ৬ জাতের পিঁয়াজ পাওয়া যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বারি-৪, বারি-৫, বারি-৬
(পিঁয়াজ সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে এই লেখাটিতে ক্লিক করুন)…
জানা যায়, হালকা শীতে পিঁয়াজ জন্মায়। যেসকল অঞ্চলে বৃষ্টি হয় না সেসকল অঞ্চলে পিঁয়াজ ভালোভাবে জন্মে। বাংলাদেশে যে অঞ্চলগুলিতে বেশি শীত থাকে সেসকল অঞ্চলে পিঁয়াজ হয়। বাংলাদেশের পিঁয়াজ আকারে ছোট ও ঝাঁঝালো হয়। কারণ, এতে অ্যাসিলিন এর মাত্রা বেশি থাকে। রান্নার বেইস/মৌলিক উপাদান হিসেবে পিঁয়াজ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রান্না শুরুর প্রথম ধাপেই পিঁয়াজ প্রয়োজন হয়। শুধুমাত্র রান্না নয় কাঁচা পিঁয়াজও খাদ্য তালিকায় অন্যতম। ভর্তা, আচার সালাদ একদম সরাসরি কাঁচা পিঁয়াজ ভাতের সাথে খেতে অনেকেই পছন্দ করেন।
রন্ধনশীল্পে এর বিচরণও বিশাল। বিশ্বের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসলা হিসেবে পরিচিত পিঁয়াজ। কালিনারিতে একটি আবশ্যকীয় উপকরণ। সকল কুজিনে এর ব্যবহার অপরিসীম। পিঁয়াজ প্রকারভেদে বিভিন্ন স্বাদের হয়। কিছু পিঁয়াজ ঝাঁঝালো স্বাদের, কিছু আছে মিষ্টি স্বাদের, কিছু কিছু পিঁয়াজ একটু তিক্ত স্বাদেরও হয়। পিঁয়াজে থাকা সালফার রান্নায় একটা ঝাঁঝালো স্বাদ তৈরি করে। এটির নিজেস্ব স্বাদ ছাড়াও অনান্য উপকরণের স্বাদের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সালফার কম্পোনেন্ট থাকায় যেকোনো খাবারের স্বাদকে অনেক তীব্র করে তোলে। এছাড়া এতে থাকা অ্যাসিলিনের কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে রান্নায় স্বাদের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
ইতিহাস
পিঁয়াজের উৎপত্তিকালের সঠিক তথ্য এখনো অজানা। তবে ধারণা করা হয় প্রায় ৬০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে পিঁয়াজের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ঐতিহাসিকগণদের মতে, এশিয়া,ইরান, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল থেকেই পিয়াজের উৎপত্তি। এর পরে সারা বিশ্বেই পিয়াজের চাষ শুরু হয়। ৫৫০০ বছরের আগে থেকেই মিশরে পিঁয়াজ ব্যবহার শুরু হয়।
মিশরীয়রা পিঁয়াজকে উপাসনার মাধ্যম হিসেবে মেনে চলতো। মানুষের মৃত্যুর পর কফিনে তারা পিঁয়াজ দিতো। চতুর্থ রাজা ‘রেমেসিস’ এর কফিনে পিঁয়াজ পাওয়া গিয়েছিলো। প্রায় ৫০০০ বছরেরও আগে থেকে মধ্য এশিয়ায় পিঁয়াজের উৎপত্তি। গৃহযুদ্ধের সময় জেনারেল ইউলিসি এস গ্রান্ড ওয়াশিংটনের যুদ্ধ বিভাগে প্রেরণ করা একটি বার্তা “I will not move my army without onion” (আমার সেনাবাহিনীকে পিঁয়াজ ছাড়া আমি পাঠাবো না)। বার্তাটি প্রেরণ করার কারণ ছিলো পিঁয়াজের মাধ্যমে ক্ষত নিরাময় করা হতো৷ যা ওই মুহুর্তে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো।
প্রাচীন গ্রিক ক্রীড়াবিদরা তাদের ভারসাম্য রক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমান পিঁয়াজ খেত। গ্রীস জয়ের পর রোমানরাও প্রতিদিন পিঁয়াজ খেত। তারা তাদের পেশীর টোন ঠিক রাখতে গ্ল্যাডিয়েটরগুলোতে পিঁয়াজ ঘষতো।প্রাচীন কালে নানা চিকিৎসায় পিঁয়াজ ব্যবহার করা হতো। সারা বিশ্বের মধ্যে লিবিয়ার মানুষ সব থেকে বেশি পিঁয়াজ খায়। উপমহাদেশে অর্থ বিনিময়ের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে পিঁয়াজ ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের বিশেষ উপহার হিসেবে পিঁয়াজ দেওয়া হতো। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে পিঁয়াজ সম্পর্কে রয়েছে নানা মতবাদ।
পিঁয়াজের স্বাস্থ্য উপকারীতা
পিঁয়াজের পুষ্টিগুণ
পিঁয়াজে রয়েছে ভিটামিন বি১(থিয়ামিন), বি২(রিবোফ্লাভিন), বি৩(নিয়াসিন), বি৫(প্যান্টোথেনি অ্যাসিড), বি৬, বি৯(ফোলেট) ও ভিটামিন সি, মিনাটেল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, নাইট্রিক অক্সাইড, অ্যাসিলিন আরো অনেক উপদান। যা শরীরের উপকারীতায় গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়, হার্টবিট ভালো থাকে ও কার্ডিভাসকুলার ফাংশন ঠিক থাকে।
পিঁয়াজে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
পিঁয়াজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। এর মধ্যে রয়েছে কোয়ারসেটিন, স্ট্রং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ। পিঁয়াজের বাইরের স্তরে সর্বোচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের বৈশিষ্ট্য
পিঁয়াজে আছে অপরিহার্য তেল এবং নিযার্স, যা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের মতো জবীনুকে মেরে ফেলতে বা দুর্বল করতে সাহায্য করতে পারে। পিঁয়াজ রয়েছে অপরিহার্য তেল সলমোনেলা এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস। যা জীবানু সংক্রমণের থেকে রক্ষা করতে পারে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
পিঁয়াজ ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা দেখা একটি বাষ্পযুক্ত পিঁয়াজে সম্পূরক গ্রহণ করার পরে শরীরের চর্বি হ্রাস পায়, সাবকুটেনিয়াস ফ্যাট(ত্বকের নিচের চর্বি), শরীরের মোট চর্বি, ভিসারালফ্যাট যা শরীরের গভীরে এবং অঙ্গগুলির চারপাশে থাকে, প্রোবায়োটিকের স্বাস্থ্য উপকারীতায় সহায়ক।
হজমে সাহায্য করে
পিঁয়াজের মধ্যে ইলনুলিন রয়েছে, এতে এক ধরণের ডায়েটারে ফাইবার রয়েছে। এটি ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ইনুলিন একটি প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা ভালো অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়াকে সাহায্য করে। যাকে বলা হয় প্রোবায়োটিকস। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি একটি দ্রবণীয় ফাইবার হিসেবেও পরিচিত, যে ধরণের ফাইবার হজম করতে সাহায্য করে।