লবস্টার হলো সী-ফুড এর মধ্যে অন্যতম একটি। কৌশলে রান্নার মাধ্যমে লবস্টারের স্বাদ মনে হয় তিনগুণ বেড়ে যায়। লবস্টার রান্নার জন্য প্রফেশনাল শেফ বা কুক হতে হবে এমন কিন্তু নয়। শুধু প্রয়োজন রান্নার পদ্ধতি জানা ও দক্ষতা। তবে এই কৌশল বা পদ্ধতি কি ও কিভাবে দক্ষতার মাধ্যমে লবস্টারকে সেরা ভাবে পরিবেশন করা যায় তা জেনে নেওয়া যাক।
১.লবস্টার নির্বাচন
অথেন্টিক লবস্টারের স্বাদ পাওয়ার জন্য সঠিক লবস্টার বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে রান্না করতে হবে তা জানার আগে ঠিক কি ধরনের লবস্টার খেতে চাইছেন তা খুঁজে বের করা জরুরি। যেমন প্রজাতি, রং, কোনটা টাটকা এ সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। এক্ষেত্রে এদের এ্যান্টিনা, লেজ, পা নাড়াতে পারে কিনা তাও লক্ষ্য রাখতে হবে। রান্নার আগ পর্যন্ত লবস্টার জীবিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এদের মৃত্যুর পরপরই ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মৃত লবস্টার খেলে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২.রান্নার জন্য প্রস্তুত
লবস্টারকে রান্নার পূর্বে কয়েকটি ধাপে প্রস্তুত করতে হয়। প্রথমত, লবস্টারকে মারতে হয়। কিভাবে এবং কেন মারতে হয় তা নিয়ে ইতিমধ্যে একটি আর্টিকেল লেখা হয়েছে। তবে সকলের বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো-
চিল আউট-
রান্নার পূর্বে লবস্টারকে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। এরপরে লবস্টার কিছুটা ঘুমন্ত থাকে ও এদের সংবেদন নিস্তেজ হয়ে যায়। এটি নিরাপত্তার সাথে মেরে ফেলার একটি কৌশল। এর ফলে লবস্টারের ব্যথা অনুভব হওয়া সম্ভাবনা কমে যায় এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নখর গুলোকে শক্তভাবে বেঁধে রাখতে হয়। যেন নখর দ্বারা আক্রমণ করতে না পারে। চিল আউটের পর এটি বোর্ডের ওপর রেখে এর ক্যাপেস থেকে পিছনে প্রথম জয়েন্ট পর্যন্ত (যেখানে চোখের নার্ভ থাকে) সেই পর্যন্ত চুরির ডগা দিয়ে একদম চপিং বোর্ড স্পর্শ করে সেই পর্যায় চাপ দিতে হবে। ফলে লবস্টারের স্নায়ু থেমে মৃত্যু ঘটবে।
বয়েলিং-
লবস্টার মারার পরে বয়েল করতে হয় এজন্য একটি বড় পাত্রে পানি ফোঁটাতে হবে। এরপর এরমধ্যে দিয়ে লবস্টার ফোঁটাতে হবে এক্ষেত্র অতিরিক্ত ফোঁটানো যাবেনা তাহলে লবস্টারের মাংস শক্ত হয়ে যাবে।
এর সাইজের উপর ভিত্তি করে বয়েল করতে হবে, সাধারণত ৪০০-৫০০ গ্রামের একটা লবস্টারকে ৭-৮ মিনিট বয়েল করতে হয়। তবে আমি ৫-৭ মিনিট কে সেরা মনে করি, অনেক শেফ প্রতি ১০০ গ্রাম কে ১ মিনিট ধরে মানে ৫০০ গ্রামের লবস্টারের জন্য ৫ মিনিট সিদ্ধ করতে বলে। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন যোগ হলে এর সাথে দুই থেকে তিন মিনিট করে সময় যোগ হতে পারে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে উজ্জ্বল লাল হলে এটি সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে গেছে বলে বোঝা যায়। এভাবে যদি বুঝতে না পারা যায় তাহলে মাংসের থার্মোমিটার ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে এক্ষেত্রে ১৩৫°ফা(৫৭°সে) এ পৌঁছালে বুঝতে হবে এটি হয়ে গিয়েছে। রান্নার পূর্বে এর টমালি শিরা ফেলে দিতে হয়।
ডিটক্স করা-
লবস্টার সিদ্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথে বরফ পানিতে ভিজিয়ে দিতে হবে। এর সাথে লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সীমিত। এ অবস্থায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে এর দেহে থাকা বালি ও জীবাণু অপসারণ হবে। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর লবস্টার গুলোকে নরমাল পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।
খোসা ছাড়ানো-
লবস্টার বয়েলের আগে এর লেজ বরাবরই শিরা থাকে তা উঠিয়ে ফেলতে হয়। লবস্টারের শেল গুলোকে ফাটানো একটু কঠিন কাজ। তবে সহজে এটি করা যায় যেমন নাটক্র্যাকার বা কিচেন সিজার দিয়ে নিখুঁতভাবে এটি অপসারন করা যায়।
৩.রন্ধন পদ্ধতি
বেকিং-
লবস্টার রান্নার একটি স্বাস্থ্যসম্মত উপায় হল বেক করা। যেহেতু এতে কোন চর্বি থাকে না তাই এটি বেক করলে প্রথমে ৩৭৫° ফা এ প্রি-হিট করে নিতে হবে। এরপর টমালি ও শিরা সরিয়ে অর্ধেক করে কেটে ফেলতে হবে। তারপর বাটার বা অলিভ অয়েল দিয়ে মাংসের উপর ব্রাশ করে এর উপর লবণ ও মরিচ দিয়ে সিজনিং করতে হবে।
বেক করার সময় এর আকারের উপর নির্ভর করে এক পাউন্ডের জন্য ১০ থেকে ১২ মিনিট ২ পাউন্ডের জন্য ১৬ থেকে ১৮ মিনিট এভাবে সময় বাড়তে পারে (তবে যদি বয়েল করা থাকে, তাহলে এইটি কে লম্বা সময় কুক করা যাবে না। মাত্র কয়েক মিনিট বেশি হলে ৪/৫ মিনিট, এর থেকে বেশি করলে টেস্ট নষ্ট হবে ফ্লাশগুলো রাবারি হবে) বেকিং এর আগে গার্লিক, লেমন জেস্ট, পার্সলে পারমেসান চিজ দিয়ে ম্যারিনেট করলে লবস্টারে অন্যরকম স্বাদ যুক্ত হয়। এসকল উপকরণের সাথে ব্রেডক্রাম দিয়ে এর লেজ স্টাফ করে স্লাইস করা স্রিম্প(চিংড়ি) বা স্ক্যালপের মতো উপাদান যোগ করলে এটিকে বিলাসবহুল খাবারের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
মনে রাখা ভালো, লবস্টারে অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করলে এর স্বাদের পরিবর্তন হয় বা খেতে ভালো লাগে না। তাই উপকরণ বুঝে ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত লেবু, রসুন, বাটার, ব্ল্যাকপেপার, স্লাইড সল্ট লবস্টারকে অভিনব স্বাদে পরিণত করতে পারে।
স্টিমিং-
লবস্টার রান্নার সহজ ও বেস্ট একটি কৌশল হলো স্টিম করা। এর ফলে লবস্টারের সফটনেস ও স্মেল অক্ষুন্ন থাকে যা একটি তরতাজা স্বাদ তৈরি করে। স্টিম করার জন্য একটি বড় পাত্রে পর্যাপ্ত পানি নিতে হবে। যেন স্টিমারের নিচে এক ইঞ্চি পর্যন্ত পানি থাকে। এবার স্টিমারের মধ্যে লবস্টার দেওয়ার আগে হাই হিটে পানিকে ফোঁটাতে হবে। প্রতিটি রান্নার সময় এর আকারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হবে। তবে ওভার কুক করা যাবে না। এবার উজ্জ্বল লাল হয়ে আসলে খোসা ছাড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করা যাবে। স্টিমিং মাংসের স্বাদ ও রসালো ফ্লেভার ভোজনরসিকদের বারবার মুগ্ধ করে।
গ্রিলিং-
গ্রিল করার পূর্বে লবস্টারকে মেরে ফেলতে হবে। তারপর এর টমালি ও শিরা সরিয়ে নিতে হবে। এরপর এতে বাটার অথবা অলিভ অয়েল ও প্রয়োজনীয় হার্বস দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট গ্রিল করতে হবে।
প্রতিটা মানুষের টেস্টবাড আলাদা হয় এবং স্বাদেরও ভিন্নতা থাকে। উপরিউক্ত যে সকল পদ্ধতি বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে মধ্যে থেকেও ভোজনরসিকদের স্বাদের পরিবর্তন হতে পারে। সেরা লবস্টার রান্নার জন্য এসকল রন্ধনপদ্ধতি অবলম্বন করে অনায়াসে খুব সুন্দরভাবে লবস্টারকে পরিবেশন করা সম্ভব।