আমরা অনেক ভাগ্যবান যে আমাদের দেশে সাগর আছে। যদি না থাকতো… কখনো কি ভেবেছেন? ভাবনা-চিন্তা বাদ, আসুন গল্প করি।
আমাকে অনেকে আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি রান্না করতে আর কি খেতে ভালোবাসো? আমার উত্তর সবসময় আমার মুখে লেগে থাকে, তা হচ্ছে “মাছ আর শেলফিশ”। আমি সবসময় খুব পছন্দ করি মাছ রান্না করতে আর খেতে। আপনি যদি মাংস খান তাহলে কি কি খাবেন, গরু, ছাগল, মুরগী, ভেড়া, হরিণ, খোরগোশ, কবুতর আরও কয়েকটি প্রাণী। মোটামুটি এইগুলোর স্বাদ আপনি নিয়েছেন। কিন্তু আপনি যদি ফিশ আর শেলফিশের দিকে তাকান, আপনার লাইফে আপনি কয় প্রজাতির মাছ খেয়েছেন। যেমন কাতাল মাছের সাথে আপনি মৃগেল মাছের স্বাদ মেলাতে পারবেন না তেমনি ইলিশ মাছের সাথে কিং ফিশের, চিংড়ি মাছের মালাইকারী আর কাঁচা ঝিনুক…আহা অমৃত।
এবার আসি গুনের কথায়। আমার বা আপনার বডি এমন কিছু নিউট্রেন্ট এ ভুগে যা আমরা মাছ/শেলফিশ থেকে পেয়ে থাকি। আমরা সবাই বলি ফিশে অনেক ভিটামিন, আসলে তাই। মাছে উচ্চ মানের প্রোটিন, আয়োডিন, বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল আর খুব কম ফ্যাট বিদ্যমান। মাছ ৭০-৮০% জল, ১৫-২০% প্রোটিন, ১-১৩% ফ্যাট(যা লিপিড নামে পরিচিত)।
এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ( বডি আর ব্রেইন এর জন্যও উপকারী) রয়েছে যা আমদের কোলেস্টেরল আর রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে heart attack আর স্টোক এর ঝুঁকি কমে।।
মাছের পেশিগুলো প্রাণীর পেশির মত না, তাই সহজে আর অল্প সময়ে রান্না করা ও হজম করা যায়। মাছের মাংসে যে কোলাজেন টিস্যুগুলো আছে, তা ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় জেলেটিন গলে যায়। তাই অনেক তাড়াতাড়ি এইটি রান্না করা যায়।
মাছকে তার পরিবার আর প্রজাতির উপর নিভর করে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন মিঠা ও নোনা জলের মাছ, আবার এদের আকৃতি (গোলাকার, চ্যাপ্টা,লম্বা) ফ্যাট যুক্ত বা ফ্যাট মুক্ত মাছ। তাছাড়া লবণাক্ত মাছ ও মিঠা পানির মাছের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা আছে।লবণাক্ত মাছ অনেক সুস্বাদু হয় কারন তাদের লবণাক্ত পরিবেশের কারনে, এই মাছের মধ্যে মিস্টি স্বাদের গ্লাইসিন আর সুস্বাদু গ্লুটামেট amino এসিড তৈরি করে যা মিঠা পানির মাছের মধ্যে বিদ্যমান না।আবার ঠান্ডা পানির মাছ থাকে গভীর সমুদ্রে আর ঠান্ডায় তাদের মধ্যে ফ্যাট বেশি থাকে। এদের রান্না করতে অনেক কম সময় লাগে।
যারা পর্যাপ্ত পরিমানে রোদে যায় না বা ভিটামিন ডি জাতীয় মাছ খায় না তাদের ভিটামিন ডি এর সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ খেলে চোখের দৃস্টি শক্তি বাড়ে আর ঘুম হয়। অন্যদিকে উষ্ণ পানির মাছ বেশি রান্না করলে তাদের তাদের ফ্যাট শুকিয়ে যায় আর স্বাদ চলে যায়। তাছাড়া, নিউট্রেন্টের দিকে লবণাক্ত পানির মাছে অনেক বেশি থাকে। মাছে ভিটামিন ডি থাকে, আবার কিছু মাছে যেমন কড লিভার অয়েলে খুব উচ্চ পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে। পেগনেন্ট মহিলাদের কখনো কাঁচা মাছ বা ভালো ভাবে রান্না হয়নি এমন মাছ না খাওয়াই ভালো কারণ কিছু মাছে উচ্চ পারদ থাকে। যেটি ভ্রুনের জন্য ভালো না।
এত বিচিত্র আর অসংখ্য প্রজাতির মাছ আছে পৃথিবীতে যার অনেকটা এখনো অজানা। আমরা আস্তে আস্তে মাছের অনেক কিছু সম্পর্কে জানবো, যেমন-
কেন মাছকে হেলদি বলা হয়? অমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড কি? কোন কোন মাছে এইটি পাওয়া যায়? কি কি জাতের মাছ দেশ-বিদেশের রান্নায় ব্যবহার করা হয়? কিভাবে মাছ সংরক্ষণ করতে হয়? কিভাবে সতেজ মাছ চিনতে পারবো? কিভাবে রান্না করতে হয়?
কোন কোন কুকিং মেথড ফিশ আর শেলফিশ রান্নার জন্য ভালো? মাছের ডিম আর মাছের লিভার কেন ভালো? ক্যাভিয়ার কি? কেন ক্যাভিয়ারের এত দাম?
আমার ইচ্ছে আছে প্রতিটি ফিশ বা শেলফিসের ছবি, কিভাবে রান্না করতে হয় সব কিছু নিয়ে লিখতে।