📍Chef Xavier's New Culinary Course is coming! Sign Up Our Newsletter for Update

📍Chef Xavier's New Culinary Course is coming!
Sign Up Our Newsletter for Update

Chef Heston Blumenthal

পরিচিতি

নাম তার হেস্টন মার্ক ব্লুমেন্থাল। তিনি ২৭ মে ১৯৬৬ সালে দক্ষিণ রোডেশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। । জার্মান ভাষায় তার নামের অর্থ ‘ফুলের উপত্যকা’ (বা ‘ব্লুম-ডেল’)। তার মা এবং বাবা দুজনেই ইহুদি ছিলেন এবং পরিবার সূত্রে তিনিও একজন ইহুদি।

ব্লুমেন্থাল শৈশব কাটে প্যাডিংটনে। পড়াশোনা করেন হ্যামারস্মিথের ল্যাটিমার আপার স্কুল, লেসি গ্রিনের, বাকিংহামশায়ারের সেন্ট জনস চার্চ অফ ইংল্যান্ড স্কুলে এবং জন হ্যাম্পডেন গ্রামার স্কুল, হাই ওয়াইকম্ব স্কুলে। রান্নার প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয়েছিল ষোল বছর বয়সে।

পারিবারিক ছুটি কাটানোর জন্য ফ্রান্সের প্রোভেন্সে যাওয়ার পর, সেখানেই 3-মিশেলিন স্টার রেস্টুরেন্ট ” L’Oustau de Baumanière ” এ গিয়ে, রেস্টুরেন্টেটির খাদ্য, তা পরিবেশনের সব আশ্চর্য জনক পদ্ধতি এবং সেখানকার পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করে তুলে। 

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একদিন হ্যারল্ড ম্যাকজি-এর লেখা “অন ফুড অ্যান্ড কুকিং: দ্য সায়েন্স অ্যান্ড লর অফ দ্য কিচেন” পড়ার সময় তিনি রন্ধনপ্রণালীর বিভিন্ন পদ্ধতির প্রতি সম্পূর্ণ ভিন্ন মনোভাব গ্রহণ করা শুরু করে, যা তাকে তার মৌলিক রন্ধনপ্রণালী আবিষ্কারের প্রেরণা দিয়েছিলো।

 

রান্নার পদ্ধতিসমূহ

তিনি ফুডপেয়ারিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আণবিক মিল চিহ্নিত করে এবং তারপর এমন ধরনের উপাদানগুলোকে নিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন অনন্য রেসিপিগুলো। এই ধরনের রেসিপিগুলোর মধ্যে প্রথমটি মধ্যে হল “ক্যাভিয়ারের সাথে ব্লুমেন্থালের সাদা চকোলেট”। তিনি অস্বাভাবিক কিছু ফিউশন রেসিপি তৈরি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে “রোস্ট ফোয়ে গ্রাস, বেনজালডিহাইড এবং অ্যাসপারাগাস সহ লিকোরিস জেলে পোচ করা স্যালমন। যদিও এই অপ্রত্যাশিত ফিউশন রেসিপিগুলোর মধ্যে অনেকগুলি খাবার সমালোচকদের দ্বারা ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে।

সেই সময় থেকে, খাদ্যের সংবেদনশীল সম্ভাবনার অন্বেষণ – গবেষণা এবং নতুন খাবার তৈরি উভয়ের মাধ্যমে – হেস্টন ব্লুমেন্থালের রান্না রুপান্তরিত হয় একটি চলমান ট্রেন্ডে । ২০০৪ সালে, তিনি তার গেস্টদের আরও উপভোগ করানোর জন্য একটি অভিনব কৌশল নিয়ে হাজির হয়ছিলেন আর সেটি ছিলো খাবারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ পরিবেশন করা। আর এই কাজে তিনি হেডফোন ব্যবহার করতেন, যেনো গেস্টের অভিজ্ঞতাটা হয় একান্তই সেই গেস্টের নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন: বেকন সিজলিং এর শব্দ শুনিয়ে বেকন-এবং-ডিম আইসক্রিম পরিবেশনের সময় মুরগির ঝাঁকুনির শব্দ শুনিয়ে গেস্টদের রীতিমতো চমকে দিয়েছিলেন তিনি। ব্লুমেন্থালের দৃষ্টিতে, এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে খাবারের প্রতি আমাদের উপলব্ধি বিষয়ভিত্তিক, যা ইন্দ্রিয় দ্বারা মস্তিষ্কে পাঠানো তথ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। তার বহুসংবেদনশীল দর্শনগুলোর মধ্যে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা ডিশ মনে হয় ‘সাউন্ড অফ দ্য সি’, যা ২০০৭ সালে “Fat Duck” এর মেনুতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। এতে ছিলো – শুকনো স্কেলপ, হিজিকি সামুদ্রিক শৈবাল, বেবি ঈল, রেজার ক্ল্যামস, ককল, ঝিনুক, সামুদ্রিক আর্চিন – এমন একটি কোর্সে তৈরি করা হয়েছে যা সমুদ্র তীরের প্রান্তের চেহারার মতো, সমুদ্রের ‘স্পুম’ এবং ভোজ্য বালি দিয়ে সম্পূর্ণ।

এটি একটি কাচের বাক্সের উপরে পরিবেশন করা হয়ছিলো যাতে প্রকৃত বালি ছিলো এবং এর সাথে হেডফোনগুলি এবং একটি ছোট আইপড দিয়ে শব্দ চালনার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি কোর্স উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ব্লুমেন্থাল নিজেই এই জাতীয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলি নির্দেশ করে রেখেছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে যদিও খাদ্য জুড়ি সৃজনশীলতার জন্য একটি ভাল হাতিয়ার, এটি এখনও শেফের রন্ধনসম্পর্কিত অন্তর্দৃষ্টির কোনও বিকল্প নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন একটি উপাদানের আণবিক প্রফাইল এতই জটিল যে, যদি এটির সাথে অন্য একটি যৌগ মিল থাকে, তবুও তারা কেন একসাথে কাজ করবে না তার কারণ হিসাবে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। ব্লুমেন্থাল রন্ধনপ্রণালীতে তার এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে “মাল্টি-সেন্সরি কুকিং” বলে অভিহিত করেন।

 

সিগনেচার ডিশ

মাংসের ফল, একটি চিকেন লিভার মুস যা ম্যান্ডারিন কমলার মতো দেখতে তৈরি করা হয়েছে, লন্ডনের ব্লুমেন্থালের ডিনার রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয়েছে। ব্লুমেন্থালের সবচেয়ে বিখ্যাত সিগনেচার ডিশের মধ্যে রয়েছে ট্রিপল-কুকড চিপস, শামুক পোরিজ, বেকন-এবং-ডিমের আইসক্রিম এবং পার্সনিপ সিরিয়াল, মক টার্টল স্যুপ।

 তিনি তার “সাউন্ড অফ দ্য সি” ডিশের সাথে ডাইনিং অভিজ্ঞতার অংশ হিসাবে শব্দের ব্যবহারকে অগ্রণী করেছেন এবং গেস্টদের সমুদ্র উপকূলের একটি রেকর্ডিং শোনান সেই রেকর্ডটিতে ছিলো মাঝে মাঝে দূরবর্তী সীগালের শব্দ, বাচ্চাদের হাসি এবং একটি জাহাজের হর্নের সাথে বিধ্বস্ত তরঙ্গ। সব মিলিয়ে তিনি একটি চমৎকার কম্বিনেশন উপস্থাপন করেছিলেন।ব্লুমেন্থাল তার সুগন্ধযুক্ত শুকনো বরফ ব্যবহারের জন্যও বহুল পরিচিত । ব্লুমেন্থাল এবং তার রেস্তোরাঁ “দ্য ফ্যাট ডাক” বেকন ডেজার্ট “ক্রেজ” এর উদ্দীপক হিসাবে কৃতিত্ব লাভ করেছে। তিনি ২০০৪ সালের প্রথম দিকে মিষ্টি, সুস্বাদু বেকন এবং ডিমের আইসক্রিম তৈরি করছিলেন, এবং খাবারটি “কৌতুহলজনকভাবে অদ্ভুত মিষ্টান্ন” হিসেবে খুবই দ্রুত খাদ্য জগতে ছড়িয়ে পড়ে।

 

ক্যারিয়ার

১৯৯৫ সালে, ব্লুমেন্থাল “ব্রেতে” একটি রান-ডাউন পাব কিনেছিলেন এবং এটিকে “ফ্যাট ডাক” হিসেবে নামকরনের মাধ্যমে খুলেছিলেন। এটি দ্রুত খাদ্য সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। ব্লুমেন্থাল ২০০৪ সালে “ব্রেতে” “হিন্দস হেড” অধিগ্রহণ করেন। ভবনটি ছিল ১৫ শতকের একটি সরাইখানা যা এখন একটি ঐতিহ্যবাহী মৌসুমী খাবার এবং ঐতিহাসিক ব্রিটিশ খাবার পরিবেশন করে। ২০১১ সালে, এটিকে মিশেলিন পাব গাইডের “বছরের সেরা পাব” হিসেবে নামকরণ করা হয়।জানুয়ারী ২০১১ সালে, ব্লুমেন্থাল ব্রেতের বাইরে তার প্রথম রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন যার নাম ছিলো ” ডিনার” এটি ছিলো লন্ডনের “ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হাইড পার্কে”। ২০১২ সালে “ডিনারকে” তার প্রথম মিশেলিন স্টার হিসেবে ভূষিত করা হয়।এটি ২০১৩ সালে বিশ্বের ৭ তম সেরা রেস্তোরাঁ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিলো। এবং এটি ২০১৪ সালে মিশেলিন গাইডে দ্বিতীয় মিশেলিন স্টার পেয়েছিলো। জুন ২০১৪ সালে, ব্লুমেন্থাল হিথ্রো বিমানবন্দরে একটি নতুন রেস্তোরাঁ ওপেন করেন যার নাম ছিলো “পারফেকশনিস্টস ক্যাফে”।

 

ঐতিহাসিক প্রভাব

ব্লুমেন্থাল তার খাবারের মধ্যে ব্রিটিশ ইতিহাস ব্যবহার করেন। তিনি ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে “দ্য ভিভেন্ডিয়ারের” একটি অনুলিপি পড়ার পর ঐতিহাসিক রান্নায় অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই অনুলিপিতে ছিলো পঞ্চদশ শতাব্দীর রান্নার অনেক অস্বাভাবিক রেসিপি।

তারপরে, তিনি “খাদ্য ও রান্নার অক্সফোর্ড সিম্পোজিয়ামে” যোগ দেন যেখানে তিনি খাদ্য ইতিহাসবিদ “রিচার্ড ফিচের” সাথে পরিচিত হন। যিনি কিনা “হিস্টোরিক রয়্যাল প্যালেসেস” এবং “মার্ক মেল্টনভিলের” জন্য কাজ করেছিলেন। পরে তিনি খাদ্য ইতিহাসবিদ “ইভান ডে” এর সাথে দেখা করেন এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে ঐতিহাসিক ব্রিটিশ কুকবুক গুলোর রেসিপি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে খাবার তৈরি করতে শুরু করেন। একটি ঐতিহাসিক রেসিপির উপর ভিত্তি করে প্রথম তৈরি করা খাবারটি ছিলো “কোয়াকিং পুডিং” যা এখন “হিন্ডস হেডের” মেনুতে রয়েছে। এর পরেটি ছিলো “বিফ রয়্যাল এবং চকোলেট ওয়াইন” যা এখন “ফ্যাট ডাক” এর মেনুতে রয়েছে।

মিডিয়া

 তিনি, “হেস্টন ব্লুমেনথাল: ইন সার্চ অফ পারফেকশন” এবং “হেস্টন ব্লুমেনথাল: মোর অ্যাডভেঞ্চার ইন সার্চ অফ পারফেকশন” নামের দুটি বিবিসি সিরিজ উপস্থাপন করেছেন।২০০৮ সালের মার্চ মাসে ব্লুমেনথাল বিবিসি থেকে Channel 4 -এ চলে আসেন, চ্যানেলটির সেলিব্রিটি শেফদের গ্রুপে যোগদান করেন যাদের মধ্যে ছিলেন জেমি অলিভার, হিউ ফার্নলি-হুইটিংস্টল এবং গর্ডন রামসে। জানুয়ারী ২০০৯ এর মার্চ মাসে ব্লুমেনথাল একটি সংক্ষিপ্ত সিরিজের অনুষ্ঠান শুরু করে, যার নাম ছিলো “হেস্টনস ফিস্ট”। ২০১০ সালে এটির ২য় সিরিজও তিনিই করেছিলেন।

২২ ফেব্রুয়ারী ২০১১ থেকে, Channel 4-এ হেস্টনের “মিশন ইম্পসিবল” সম্প্রচার শুরু করেছিলো। জানুয়ারী ২০১২-এ, Channel 4- এ “How to Cook Like Heston” প্রোগ্রামটি শুরু করা হয় । প্রোগ্রামটি হোম শেফদের লক্ষ্য করে নির্মান করা হয়েছিলো। ২০২২ সালের জুলাই মাসে, ব্লুমেন্থাল “মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া” এর চূড়ান্ত পর্বে অতিথি বিচারক হিসেবে উপস্থিত হন।

 

ব্যক্তিগত পুরস্কারসমূহ

২০০৪ সালে, ব্লুমেন্থাল গর্ডন রামসে, ফিল হাওয়ার্ড এবং রেমন্ড ব্ল্যাঙ্কের সাথে যোগদান করে “দ্য ক্যাটি অ্যাওয়ার্ডে ” “শেফ অ্যাওয়ার্ড” জিতেছিলেন। জানুয়ারী ২০০৬ সালে, ব্লুমেন্থালকে ব্রিটিশ গ্যাস্ট্রোনমিতে তার অনন্য অবদানের জন্য নিউ ইয়ারস অনার্স লিস্টে ” OBE ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 

রান্নায় তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে। জুলাই ২০০৬ সালে, ব্লুমেন্থালকে রিডিং ইউনিভার্সিটি দ্বারা সম্মানসূচক “ডক্টর অফ সায়েন্স” ডিগ্রী প্রদান করা হয়। জুলাই ২০০৬ সালে, ব্লুমেন্থাল ছিলেন প্রথম শেফ যাকে রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি দ্বারা “অনারারি ফেলোশিপ” প্রদান করা হয়েছিলো।

ব্লুমেন্থাল ২০০৭ সালে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের সম্মানসূচক “স্নাতকোত্তর” পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, ব্লুমেন্থালকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা একটি সম্মানসূচক “ডক্টর অফ সায়েন্স ” ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

বছরের সেরা রেস্তোরাঁর পুরস্কার – ডেকান্টার ম্যাগাজিন, 1998। ২০০১ সালে “গুড ফুড গাইডের” দ্বারা বছরের সেরা শেফ নির্বাচিত হন।জিকিউ(GQ) দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফুড অ্যান্ড ওয়াইন পার্সোনালিটি অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পান তিনি।

 

ব্যক্তিগত জীবন

ব্লুমেন্থাল তার প্রথম স্ত্রী জান্নাকে ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান ছিলো। তারা ২০১১ সালে বিচ্ছেদ এবং ২০১৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদ করে। ব্লুমেন্থাল বলেন, ফ্যাট ডাকের সাফল্যের একটি “বিশাল অংশ” ছিলো জান্না, কারন যখন তিনি কাজ করতেন সে সময় জান্না তার পরিবারের যত্ন নিতো । ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, ব্লুমেন্থাল আমেরিকান খাদ্য লেখক সুজান পিরেটের সাথে সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। ২০১৭ সালে, ফরাসি এস্টেট এজেন্ট স্টেফানি গউভিয়ার সাথে তার একটি মেয়ে ছিল। তারপর ব্লুমেন্থাল ফ্রান্সে চলে যান এবং ২০১৮ সালে গউভিয়াকে বিয়ে করেন। ২০২৩ সালে, তিনি তাদের বিচ্ছেদ ঘোষণা করেন এবং মেলানি সিসনের সাথে বাগদান করেন।

কলমে: ফয়সাল ভূঁইয়া