মৌসুম/ঋতু ও বলা যেতে পারে। একে সিজনও বলা হয়। ‘সিজন’ ওল্ড ফ্রেঞ্চ সিজন থেকে এসেছে। যার অর্থ ‘রোপণ/বপন’। বছরের সাথে সাথে আবহাওয়ার পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন ঘটে।
এই পরিবর্তনকে মূলত ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই গুলোকে এক একটা সব মৌসুম বলা হয়। যেমন আমাদের দেশে ৬ টি ঋতু। তেমনি বিভিন্ন আঞ্চলিক বৈচিত্র্যতা ও সংষ্কৃতির উপর ভিত্তি করে মৌসুমের প্রকৃতি ও সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর গতিপথের কারণে মৌসুমের পরিবর্তন ঘটে।
১৭৮০ সালে সোসিয়েটাস মেটিওরেলজিকা প্যালাকটিনা একটি প্রাথমিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার দ্বারা ঋতু গুলোকে ৩ টি মাসের গোষ্ঠী হিসেবে সঙ্গায়িত করেন। মৌসুম সম্পর্কে আমাদের সবারই ধারণা রয়েছে৷ এই মৌসুমের সাথে সাথে মানুষের শারীরিক অবস্থার ও পরিবর্তন ঘটে। যেমন গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে পানির প্রয়োজনীয়তা বেশি। এসময় তরল খাবার খাওয়া উচিত। এ জন্য মৌসুম অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা জরুরি।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো রান্নার ক্ষেত্রে মৌসুমের গুরুত্ব। রান্নায় সিজনালিটি হলো মৌসুমী উপাদান ব্যবহারকে বোঝায় যা পাওয়া যায় বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে। এসকল উপাদান রান্নার সাথে গভীরভাবে জড়িত। মৌসুমি উপাদানে শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ, মাংস সবকিছুতেই মৌসুমের একটি প্রভাব সৃষ্টি হয়। ফলে রান্নায় স্বাদ ও মানকেও প্রভাবিত করে। তাই বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট তাদের মেনুতে মৌসুমকে গুরুত্ব দেয় সব থেকে বেশি। কারণ গেস্টরা নরমাল সময় এ উৎপাদিত খাবার খেতে পছন্দ করে। মৌসুম আমাদের রান্নাকে কিভাবে প্রভাবিত করে তা সম্পর্কে জানব-
সতেজতা ও স্বাদ: মৌসুমি খাবার অনেক তাজা এবং এর স্বাদ ভাল হয় কারণ এটি তার সর্বোচ্চ পরিপক্কতার সময় কাটা হয়। তাজা উপাদানগুলি খাবারের সামগ্রিক স্বাদ এবং গুণমানকে উন্নত করে। যেমন, শীতকালে টমেটো রসালো এবং বেশি স্বাদযুক্ত হয় যখন এটি অন্য মৌসুমে পাওয়া যাবে তখন এর স্বাদের পরিবর্তন হয়।
পুষ্টিগুন: টাটকা ফল ও সবজির পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। একটি সবজি বা ফল ফসল কাটার পর যত বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা থাকে, তত বেশি পুষ্টি হারায়। অতএব, মৌসুমে উৎপাদিত খাবার খেলে সর্বাধিক পুষ্টির জোগান পাওয়া যায়।
স্থানীয় কৃষিকে সহায়তা করা: মৌসুমি পণ্য সংগ্রহ করার অর্থ স্থানীয় কৃষকদের সাহায্য করা। যা স্থানীয় কৃষি ও অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে, কৃষি জমি এবং ঐতিহ্যগত চাষাবাদ পদ্ধতি সংরক্ষণ করা।
খরচ: মৌসুমে সব কিছু সাধারণত বেশি উৎপাদিত হয়, তাই এর মুল্য কম থাকে। যখন ফল এবং শাকসবজি মৌসুমে পাওয়া যায, তখন ভোক্তাদের জন্য আরও সাশ্রয়ী হয়।
রান্নার সৃজনশীলতা: মৌসুমি উপাদান দিয়ে রান্না রান্নাঘরে সৃজনশীলতা সৃষ্টি হয়। একজন শেফ বিভিন্ন মৌসুমি উপাদান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা/গবেষণা করে, যার ফলে নতুন ও উদ্ভাবনী রেসিপি তৈরি হয়।
প্রকৃতির সাথে সংযোগ: মানুষ পৃথিবীর প্রাকৃতিক ছন্দের সাথে মিলিত হতে পারে মৌসুমি খাবারের মাধ্যমে। এর ফলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয় ও মৌসুমী খাবারগুরলোর সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এটি আমাদের জীবনের প্রকৃতি চক্র এবং পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: অনেক সংস্কৃতির রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্য ও উৎসব মৌসুমি উপাদানকে কেন্দ্র করে হয়। এই উপাদানগুলি ব্যবহার করে মানুষকে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যগত অনুশীলনের সাথে পরিচিত ও মিলিত করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, মৌসুমি উপাদানের সাথে রান্না করা স্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে একটা চক্রে আবদ্ধ করে, স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা করে এবং খাদ্য গ্রহণের জন্য একটি মজবুদ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করে। রান্নায় মৌসুমী উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্যই উপকার করে না বরং রন্ধন অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করে, প্রাকৃতিক বিশ্ব এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের সাথে সংযুক্ত করে।