বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডার নামে যেমন প্রায় মিল তেমনি দেখতেও প্রায় একই। আবার ২ টি উপকরণই বেকিংয়ে ব্যবহৃত হয়। কি কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল ব্যাপারটা! মানে পার্থক্যটা কোথায়!! হুমম পার্থক্য আছে। আপনি যদি একজন রন্ধন প্রেমী হয়ে থাকেন তবে আপনাকে এর আসল রহস্য জানতে হবে। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আসলে আমরা উন্নতি করতে পারবো না। এজন্য আমাদের রান্নার বেসিক বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন। তাই চলুন জেনে নেই বেকিং সোডা আর বেকিং পাউডারের পার্থক্য।
বেকিংয়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো এই দুই উপকরণ। কারণ এরা বেকিংয়ের কিছু সাধারণ যৌগ। যা ব্যাটার/ময়দাকে ফুলতে ও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। দুটি পাউডারই রাসায়নিক যৌগ, এরা বেকিং এর সময় কার্বনডাইঅক্সাইড তৈরি করতে সহায়ক। কেক, কুকিজ, ব্রেড তৈরিতে এদের ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। এদের পার্থক্য জানার আগে জানি এরা কি বা এদের কাজ কি ও কেন ব্যবহার করা হয়।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা যা বাইকার্বোনেট নামেও পরিচিত। এটি NaHC03 এর সূত্র সহ এক ধরনের ক্ষারীয় যৌগ। যা, লেবুর রস, টকদই, বাটারমিল্ক, ভিনেগারের মতো অ্যাসিড ও অ্যাসিডিক উপাদান গুলোর সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষারীয় ও কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে। ফলে ব্যাটার/খামিরের মধ্যে আটকে গিয়ে ব্যাটার/খামিরকে ফুলে উঠতে, হালকা ও তুলতুলে করতে সাহায্য করে। বেকিং সোডা মাফিন, প্যানকেক, কুইক ব্রেডের মতো পন্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
বেকিং পাউডার
বেকিং পাউডার হলো কেক, কুকিজ ও অনান্য বেকড আইটেমকে ফুলতে, নরম, তুলতুলে, হালকা করার জন্য একটি রাসায়নিক যৌগ। যা বেকিং সোডা, টারটার ক্রিম ও করণ স্টার্সের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। এটি বেকারি পন্য তৈরিতে স্টৈমুলাস হিসেবে কাজ করে। যখন এটি ভেজা উপাদানের সাথে মেশানো হয় তখন তাপের সংস্পর্শে এসে অ্যাসিড ও বেকিং সোডার মধ্যে বিক্রিয়া ঘটায়। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। যা ময়দা/খামিরের মধ্যে আটকে যায়। ফলে, ময়দা/খামির ফুলে উঠে ও বড় হয়। অবশেষে বেকড পন্যগুলো হালকা ও তুলতুলে টেক্সচার পায়। বেকিং পাউডার ২ ধরনের হয়। একটা হলো ডাবল এ্যক্টিং বেকিং পাউডার। অন্যটি সিঙ্গেল এ্যাক্টিং বেকিং পাউডার। ডাবল এ্যাক্টিং বেকিং পাউডার ২ ভাবে কাজ করে। কিছু গ্যাস রুম টেম্পারেচারে তৈরি হয়। আর কিছু গ্যাস তাপের সংস্পর্শে এলে তৈরি হয়। অন্যদিকে, সিঙ্গেল এ্যাক্টিং বেকিং পাউডার হলো একবার ভেজা অবস্থাতেই গ্যাস তৈরি করে। যা দ্রুত তাপের কাছাকাছি নিতে হয়।
বেকিং সোডা আর বেকিং পাউডারের পার্থক্য জেনে নেওয়া যাক-
বেকিং সোডার পরিবর্তে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে পরিমাণে পার্থক্য হয়। কারণ যে পরিমানে বেকিং সোডা ব্যবহার করা হয় সেই পরিমাণে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যায় না। বেকিং সোডার পরিবর্তে বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে হলে বেকিং সোডার থেকে ৩ গুণ বেশি বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ ১ চাচম বেকিং সোডা হলে ৩ চা চামচ বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে বেকিং পাউডারের পরিবর্তে বেকিং সোডা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ১ টেবিল চামচ বেকিং পাউডারের পরিবর্তে ১ চা চামচ বেকিং সোডা নিতে হবে। এজন্য বেকিং সোডা সক্রিয় করতে হলে এর সাথে অ্যাসিড/অ্যাসিডিক মিশিয়ে নিতে হবে। কিন্তু বেকিং পাউডারের পরিবর্তে বেকিং সোডা সব ধরনের খাবারে ব্যবহার উপযোগী না।
কিছু খাবারের ক্ষেত্রে বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডার ২ টা উপকরণই ব্যবহার করতে হয়। কারণ বেকিং সোডা ব্যবহারে খাবারের ফ্লেভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই খাবারের স্বাদ ধরে রাখতে ও সঠিক টেক্সারে আনতে ২ টি উপকরণের প্রয়োজন পরে। এছাড়া বেকড আইটেমগুলোর উপরের ব্রাউন কালার নিয়ে আসতে বেকিং সোডা সাহায্য করে। কিন্তু প্যান কেক এর মতো খাবারগুলোতে শুধু বেকিং সোডা ব্যবহার করলে কালারটি বিবর্ণ হয়ে যায়। এজন্য ২ টি উপকরণ ব্যবহার করলে টেস্ট ও লুক বজায় থাকে।