পাঙ্গাশ এর ইংরেজি নাম Pangasius (প্যাঙ্গাসিয়াস) আমাদের দেশের রেস্টুরেন্টে বাসা মাছ (বাসা ফিলেট) নামে পরিচিত এবং অনেকের কাছে খুব প্রিয় একটি মাছ। এটি গ্রাম বাংলার মানুষের প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস।
দুনিয়া জুড়ে মোটামুটি ২২ ধরনের প্রজাতির পাঙ্গাশ পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে এর চাষ হয়, তেমন প্রাকৃতিক ভাবে বিশেষ করে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ছাড়াও বিভিন্ন নদীতে বড় আকারের পাঙ্গাশ পাওয়া যায়। অনেক বৈশিষ্ট্যর কারণে এই মাছকে ব্যাপকভাবে উৎপাদন করা যায়, এমনকি এই মাছ লবণাক্ত জলের আবাসস্থলে বেঁচে থাকার ক্ষমতা, উচ্চ পিএইচ অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পাশাপাশি 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া, অন্যান্য স্বাদু পানির মাছের তুলনায় একটি অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্রের অঙ্গের অধিকারী, এটি এমন পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে যেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন সীমিতভাবে পাওয়া যায়।
আমরা হয়তো অনেকে জানিনা, পাঙ্গাশ মাছ অন্যতম পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ একটি মাছ। এই মাছে এমন কিছু গুনাগুন রয়েছে, সাধারনত অন্যান্য মাছের থেকে অনেক বেশি এমনকি শস্য, ফল, সব্জির থেকে বেশি পরিমানে আমিষ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ওমেগা-৩ (DHA-Docosahexaenoic Acid, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বাড়ায়। আমরা জানি যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু, ডকোসাহেক্সায়েনোইক অ্যাসিড, বা ডিএইচএ, নিউরাল কোষের বৃদ্ধির জন্য সরাসরি উপকারী। এটি একটি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড যা মস্তিষ্ককে স্বাভাবিকভাবে এবং দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়) অ্যামাইনো অ্যাসিড (২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে খাদ্যের মধ্যে, তার মধ্যে কিছু অত্যাবশকীয় আর কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কি পরিমানে আছে তার উপর নির্ভর করে আমিষের গুনাগুণ – তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অত্যাবশকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের (হিস্টিডিন, আইসোলিউসিন, লিউসিন, লাইসিন, মেথিওনাইন, ফেনিল্যালানিন, থ্রোনিন, ট্রিপটোফান এবং ভ্যালাইন নামক অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের কোষ দ্বারা অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি করা যায় না তাই এইগুলোও অন্য মাধ্যমে থেকে নিতে হয়) পরিমান পাঙ্গাশ মাছে (তারপর তেলাপিয়া আর রুইমাছে) অনেক বেশি। প্রতি এক গ্রাম পাঙ্গাশ মাছে আছে ৪৩০ মিলিগ্রাম অত্যাবশকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড কিন্তু জাতিসংঘের সুপারিশে বলা হয়েছে প্রতি একগ্রামে ২৭৭ মিলিগ্রাম অত্যাবশকীয় অ্যাসিড থাকা প্রয়োজন। এইটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, বিভিন্ন বয়সের শিশুদের জন্য এইটি ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া ১২৬ গ্রাম মাছে বিভিন্ন পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্যালরি- ১৫৮ গ্রাম, প্রোটিন- ২২.৫ গ্রাম, ফ্যাট- 7গ্রাম, সাটুরেটেড ফ্যাট- ২ গ্রাম, কোলেস্টেরল- ৭৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট- ০ গ্রাম, সোডিয়াম- ৮৯ মিলিগ্রাম। তাছাড়া এইটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, উচ্চ রক্তচাপের রুগিদের জন্য ভালো কারন এতে সোডিয়ামের পরিমান খুব কম। এতে প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন জিঙ্ক এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, এইগুলোও শরীরে ইমিউনিটি বৃদ্ধি, আহত টিস্যু নিরাময় এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য। আর যাদের শরীরের মধ্যে উচ্চ ওমেগা-৩ রয়েছে তারা কম ওমেগা-৩ ধারন করা মানুষের থেকে ২.২ বছর বেশি বাঁচে।
এই মাছ সহজে হজম হয়। এটি মানবদেহকে বি ভিটামিন সরবরাহ করে, যা স্নায়ুর চাপ থেকে রক্ষা করে, চাপের প্রভাব প্রতিরোধ করে, মেজাজ উন্নত করে এবং ঘুমকে স্বাভাবিক করে। জৈবিকভাবে সক্রিয় পদার্থ যা প্যাঙ্গাসিয়াস তৈরি করে চুল, ত্বক, নখের (টোকোফেরল) অবস্থার উন্নতি করে, বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলিকে ত্বরান্বিত করে (রেটিনল), মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপকে উদ্দীপিত করে (ফসফরাস), ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) এবং রক্তনালীগুলি পরিস্কার রাখে।
পাঙ্গাশ মাছ খুব শক্তিশালী মাছ, তাই ময়লা পানিতে এইটি ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে, আবার অনেক খামারি পুকুরে বিভিন্ন রাসায়নিক (পিসিবি এবং পারদের মত রাসায়নিকগুলো তাদের দেহে বিকশিত হতে পারে) ব্যবহার করে, তা মাছ খেয়ে তা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই রান্না করার আগে ভালো করে পরিস্কার করে আর সঠিক তাপে রান্না করুন। সাধারণত ৬০ সেন্টিগ্রেডে জীবাণু মরে যায়।
পাঙ্গাশ মাছ একটি শিকারী মাছ, যেটি মোটামুটি যা পায় তাই খেয়ে ফেলে। কিন্তু এটি পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ একটি মাছ। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এই মাছ খেলে মানবদেহের অনেক উপকারে আসে।